ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫ , ২৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানে হামলার কারণ ব্যাখ্যায় যা বললেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ০৭-০৫-২০২৫ ০২:২৯:৩৬ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৭-০৫-২০২৫ ০২:২৯:৩৬ অপরাহ্ন
পাকিস্তানে হামলার কারণ ব্যাখ্যায় যা বললেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা যুদ্ধের রূপ ধারণ করতে চলেছে ইতোমধ্যে। দুই সপ্তাহ ধরে চলা হুমকি-ধমকির পর এবার বাস্তবিকই পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরের কয়েকটি স্থানে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে দিয়েছে ভারত। মঙ্গলবার (৬ মে) গভীর রাতে পরিচালিত এ অভিযানকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়েছে দেশটি। বুধবার (৭ মে) সকাল থেকে হামলার জবাব দিতে উঠেপড়ে লেগেছে পাকিস্তানও। এমন প্রেক্ষাপটে পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের যুদ্ধের মতো চূড়ান্ত পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হওয়ার সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে সারাবিশ্ব। এদিকে, যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী এমন হামলার বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে এরই মধ্যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।

বুধবার (৭ মে) দ্য হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে তার সে ব্যাখ্যা উঠে এসেছে। সেখানে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, একটি রেসিট্যান্স ফ্রন্ট পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করেছে। এই সংগঠনটির সঙ্গে পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষিত গোষ্ঠী লঙ্কর-ই-তৈয়েবার সম্পর্ক রয়েছে। এর মাধ্যমেই বোঝা যায় কাশ্মীরে হামলায় পাকিস্তানের যোগসূত্র রয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য ও বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ সত্ত্বেও পাকিস্তান তাদের ভূখণ্ড থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পাকিস্তান ইতোমধ্যে বিশ্বের কাছে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে একটি পরিচিতি তৈরি করেছে।

বিক্রম মিশ্রি বলেন, ভারত ২০২৪ সালের মে এবং নভেম্বর মাসে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা কমিটির মনিটরিং টিমকে ওই রেসিট্যান্স ফ্রন্টের সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিল এবং বলা হয়েছিল এটি পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ভারত মনিটরিং টিমকে জানিয়েছিল যে লস্কর ও জইশ-ই-মোহাম্মদ, দ্য রেসিট্যান্স ফ্রন্টের মতো ছোট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে কাজ করছে। পরবর্তীতে ওই বছরের ২৫ এপ্রিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রেস বিবৃতিতে টিআরএফ’র কার্যক্রম বন্ধে পাকিস্তানকে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানায়। তিনি বলেন, পেহেলগামে হামলা পর তদন্তে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা উঠে এসেছে। কারণ এই গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে পাকিস্তান যোগাযোগ রক্ষা করেছিল। পরবর্তীতে রেসিট্যান্ট ফ্রন্টের দায় স্বীকার এবং লস্কর-ই-তৈয়বার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টগুলোতে অনেক বিষয় স্পষ্ট হয়।

ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরসহ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পেহেলগামে হামলা চালানো হয়েছে। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই গোষ্ঠীগুলো আরও হামলার পরিকল্পনা করছে। এজন্য তাদের থামাতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে।

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।এরপর থেকে দুদেশের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করে পরিস্থিতি, রীতিমতো যুদ্ধের রূপ ধারণ করেছে যা এখন। বুধবার (৭ মে) সকালে এক ব্রিফিংয়ে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর কোটলি, ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফফরাবাদে ‘কাপুরুষোচিত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। ইতোমধ্যে এর বদলা নিতে শুরু করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।একইদিন সকালে আরেক বিবৃতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানি সেনাদের গোলাবর্ষণে তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

এর আগে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে হামলার পর ভারত সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু করেছে। এর আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের ৯টি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। তবে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কোনো স্থাপনাকে এ অভিযানে নিশানা বানানো হয়নি উল্লেখ করে ভারত দাবি করছে, মূলত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং হিজবুল্লাহ মুজাহিদীন গোষ্ঠীর অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা, যেখানে অন্তত ৭০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।

বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন
 
 
 
  


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ